পিরিয়ডের সময় শসা খেলে কি হয় জানুন
অতিরিক্ত মাসিক বন্ধ করার ঘরোয়া উপায় জানুনসুপ্রিয় পাঠক, পিরিয়ডের সময় শসা খেলে কি হয় এবং গর্ভাবস্থায় শসা খাওয়া যাবে কি না ও শসা খাওয়ার উপকারিতা এবং শসা চাষ পদ্ধতি সহ শসার সকল তথ্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করেছি, শসার সকল তথ্য নিয়ে। পাশাপাশি আলোচনা করেছি পিরিয়ডের সময় শসা খেলে কি হয় এবং গর্ভাবস্থায় শসা খাওয়া যাবে কি না ও শসার উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে।
সূচিপত্রঃপিরিয়ডের সময় শসা খেলে কি হয় জানুনশসা চাষ পদ্ধতি
শসা এক প্রকারের ফল যার চাষ দিন দিন বেড়েই চলেছে আমাদের দেশে। তবে সঠিক পদ্ধতি না জানায় অনেকে শসা চাষ করার পরে হতাশ হয়ে যান। চলুন জেনে নেওয়া যাক শসা চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে,
শসা চাষ করার জন্য সর্বপ্রথম আপনাকে উর্বর দো-আঁশ জমি নির্বাচন করতে হবে। ভালো করে চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরা করে নিতে হবে এবং আগাছা পরিষ্কার করে জমি সম্পূর্ণ সমতল করে নিতে হবে। জমি নির্বাচন করার পর চারা রোপনের উপযোগী করতে হবে।
এরপর শীতকালীন সময়ের মধ্যে শসার বীজ বপন করতে হবে। বীজ জমিতে বপন করার পূর্বে একদিন ও এক রাত পানিতে ভিজিয়ে রাখলে ভালো হয়। শসার গাছ সাধারণত ৮০-১২৫ দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। উন্নত জাতের শসার বীজ সংগ্রহ করে তা বপন করতে হবে তবেই শসার বাম্পার ফলন হবে ও মুনাফা ভালো আসবে।
আমাদের দেশে মূলত বিদেশি হাইব্রিড জাতের শসা বেশি চাষ করা হয়ে থাকে। তবে বাংলাদেশে বেসরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠান উন্নত জাতের শসার বীজ উদ্ভাবন করেছে সেগুলো হলো,
- গ্রীন কিং
- আলাভী
- বীরশ্রেষ্ঠ
- নওগাঁ গ্রীন
- বাঁশখালী
- মধুমতি
- লাকি-৭
- হিমেল
- শীতল
- সানটং-৪
- মাতসুরি
- পান্ডা
- ভেনাস
- গ্রিন ফিল্ড
শসার ফলন ভালো পাওয়ার জন্য নিয়মিত আগাছা পরিষ্কার করার পাশাপাশি গাছের বৃদ্ধির জন্য সার প্রয়োগ করতে হবে। তার সাথে গোবর, ছাই, জৈব সার, পচা কচুরিপানা প্রয়োগ করতে হবে। আবার শসা পানির প্রতি খুব সংবেদনশীল সে কারণে মাটির রস একটু কমলে সেচ দিতে হবে।
পাশাপাশি বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের জন্য ব্যবস্থা রাখতে হবে যাতে করে শসার গাছের কোন ক্ষতি না হয়। শসার চারা রোপণ করার পর ভালোভাবে পরিচর্যা করলে ৬০দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহ করা যাবে।
শসা খাওয়ার উপকারিতা
শসা সারাবিশ্বে চাষ হওয়া সবজির মধ্যে ৪নম্বর পজিশনে অবস্থান করছে। শসার নানান গুণ রয়েছে বিশেষ করে অতিরিক্ত মেদ নিয়ন্ত্রণ করা ও মহিলাদের রূপচর্চায় বেশি ব্যবহার করা হয় শসা। পাশাপাশি সালাদ ও সবজি হিসেবে শসার ব্যবহার করা হয় সব জায়গায়। আসুন জেনে নেওয়া যাক শসা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে,
- শরীরের পানি শূন্যতা কমাতে
একটি শসাতে প্রায় ৯০% পানি রয়েছে যার কারণে আপনি শসা খেলে আপনার শরীরের পানি শূন্যতা দূর হবে পাশাপাশি শরীর সুস্থ ও সতেজ থাকবে। সে কারণে সারা বছর শসা খাওয়ার অভ্যাস ধরে রাখুন।
- অতিরিক্ত মেদ কমাতে
যেসব মানুষ অতিরিক্ত ওজন ও মেদ নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগছেন তারা নিয়মিত শসা খাওয়ার অভ্যাস করুন। কেননা শসা খুবই কম ক্যালরিযুক্ত খাবার সে কারণে আপনি যদি শসা খান তাহলে আপনার দেহের খাদ্যের চাহিদা পূরণ হওয়ার পাশাপাশি অতিরিক্ত ওজন কমে আসবে। এমনকি যাদের দেহ শুকিয়ে যায় তারা শসা খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন।
- শরীরের তাপমাত্রা ঠিক রাখে
অনেক মানুষের বিভিন্ন সময় শরীরের ভেতরে এবং বাইরে প্রচন্ড তাপ অনুভূত হয় এবং দেহে জ্বালাপোড়া হয়। এ ধরনের সমস্যা যাদের রয়েছে তারা নিয়মিত শসা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এমনকি রোদের তাপের কারণে যাদের ত্বকে জ্বালাপোড়া অনুভূত হয় তারা শসা কেটে ত্বকে ঘষে নিতে পারেন তাতে করে ত্বকের জ্বালাপোড়া কমে যাবে।
- দেহের বিষাক্ততা দূর করে
শসা খাওয়ার উপকারিতা যতগুলো রয়েছে তার মধ্যে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ উপকার হলো দেহের বিষাক্ত তা দূর করা। কারণ শসাতে প্রচুর পরিমাণে পানি রয়েছে যা দেহের বর্জ্য ও বিষাক্ত পদার্থ অপসারণ করতে কাজ করে থাকে। পাশাপাশি নিয়মিত শসা খাওয়ার ফলে কিডনিতে সৃষ্ট পাথর গলে যায়।
- ভিটামিনের অভাব পূরণ করে
আমাদের শরীরকে ঠিক রাখার জন্য যেসব ভিটামিন উপাদানের প্রয়োজন হয় তার সবগুলোই শসার মধ্যে রয়েছে। নিয়মিত শসা খাওয়ার ফলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায় ও শরীর সুস্থ থাকে। যার কারণে শসা কে ভিটামিন এ বি এবং সির উৎস বলা হয়।
- হজম শক্তি বাড়াতে
শসা খাওয়ার উপকারিতা যতগুলো রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো হজম শক্তি বাড়াতে কাজ করে। কেননা শসাতে উচ্চমাত্রায় পানি এবং নিম্নমাত্রার ক্যালরি রয়েছে যার কারণে শসা খেলে দেহের পানি শূন্যতা দূর করার পাশাপাশি পাকস্থলীকে খাদ্য হজম করতে সহায়তা করে।
- দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে
রূপচর্চার কারণে অনেক সময় মানুষ শসা গোল করে কেটে চোখের পাতার উপর বসিয়ে রাখে যাতে করে চোখের পাতায় জমে থাকা ময়লা অপসারিত হয় পাশাপাশি দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি হয়। মানুষের চোখের প্রদাহ প্রতিরোধক উপাদান হিসাবে শসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
সে কারণে নিজের দৃষ্টি শক্তি ঠিক রাখতে এবং যাদের চোখে কম দেখার অভ্যাস রয়েছে তারা নিয়মিত শসা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
- ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে
যাদের ত্বকে ব্রণের সমস্যা রয়েছে বা ব্রণের দাগ রয়েছে তারা নিয়মিত শসার ব্যবহার করতে পারেন। তার জন্য আপনাকে সতেজ শসা সংগ্রহ করার পর পানি দিয়ে ধুয়ে গোল করে কেটে নিয়ে সেটা ত্বকের উপর ঘোষতে হবে তবে ব্রণের দাগ থেকে । পাশাপাশি শসা নিয়মিত খাওয়ার ফলে দেহের সৌন্দর্য ধরে রাখা সম্ভব।
- মুখ পরিষ্কার করতে
মুখের দুর্গন্ধ দূর করা ও সংক্রামণ আক্রান্ত মাড়ির চিকিৎসা করতে শসা খুবই উপকারী। শসাতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে সাইটোকেমিক্যাল রয়েছে কারণে ফলে সেটি মুখে দেওয়ার ফলে বিশেষ বিক্রিয়া ঘটিয়ে মুখের জীবাণু ধ্বংস করে এবং দুর্গন্ধ দূর করে। পাশাপাশি যাদের ঘন ঘন কফ ওঠা এবং কাশির সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত শসা খাওয়ার অভ্যাস করুন।
- চুল ও হাত-পায়ের নখ সতেজ রাখে
শসার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে খনিজ ও সিলিকা থাকে যা আমাদের চুল শক্তিশালী করে এবং হাত-পায়ের নখ সতেজ রাখে। তাছাড়াও শসাতে থাকা সালফার ও সিলিকা চুল বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে থাকে। বিশেষ করে যাদের চুলের গোড়া দুর্বল এবং চুল কোঁকড়ানো তারা নিয়মিত শসা খাওয়ার অভ্যাস করুন।
- মাথাধরা দূর করতে
অনেক মানুষ আছে যারা খুব সকালে ঘুম থেকে ওঠার ফলে মাথায় ব্যথা অনুভূত হয় এবং শরীর ম্যাজম্যাজ করে। সে কারণে প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার আগে অবশ্যই শসা কেটে কয়েক টুকরো খেয়ে নিবেন। কেননা শসাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি এবং সুগার রয়েছে যা ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠার পরে মাথা ব্যথা সমস্যার সমাধান করবে।
- গেটেবাত থেকে রেহাই করে
গেটেবাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নিয়মিত শসা খাওয়ার অভ্যাস করুন কারণ শসায় প্রচুর পরিমাণে সিলিকা রয়েছে। সে কারণে গাজরের রস এবং শসার রস একসাথে মিশিয়ে খেলে দেহের ইউরিক আ্যসিডের মাত্রা কমে আসে যার ফলে গেটেবাতের ব্যথা ভালো হয়ে যায়।
পিরিয়ডের সময় শসা খেলে কি হয়
মেয়েদের পিরিয়ড চলাকালীন প্রচুর পরিমাণে শারীরিক পুষ্টির প্রয়োজন হয়। কেননা পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে তাদের দেহ অনেক প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ হারিয়ে ফেলে সে কারণে তাদের দেহে পুষ্টি উপাদান ঠিক রাখার জন্য বেশি করে ভিটামিন, খনিজ এবং ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। পিরিয়ডের সময় শসা খেলে কি হয় চলুন জেনে নেওয়া যাক,
পিরিয়ড চলাকালীন মেয়েদের দেহ যে খনিজ সবচেয়ে বেশি হারায় সেটা হলো আয়রন যা শসাতে প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। তাছাড়াও শসাতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও ফাইবার রয়েছে যা পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে দেহে শক্তির চাহিদা পূরণ করে থাকে। তার জন্যই পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে শসা খাওয়ার অভ্যাস করুন তাতে করে শরীরের ক্ষতি অনেকটা কমে আসবে।
তাছাড়া শসার প্রায় ৯০% পানি যা দেহের পানি স্বল্পতা দূর করার পাশাপাশি পিরিয়ড ক্লিয়ার হতে সাহায্য করে থাকে। এছাড়াও শসা ফাইবার সমৃদ্ধ একটি ফল সে কারণে সব সময় শসা খাওয়ার অভ্যাস করুন যাতে করে পিরিয়ড চলাকালীন দেহে শক্তির ঘাটতি না পড়ে।
গর্ভাবস্থায় শসা খাওয়া যাবে কি
গর্ভবতী মহিলাদের শরীর সুস্থ রাখতে প্রচুর পরিমাণে পানির প্রয়োজন হয় যার কারণে গর্ভাবস্থায় আপনি শসা খেতে পারেন তবে সেটা পরিমাণ মতো। গর্ভাবস্থায় শসা খাওয়া যাবে কি বা গর্ভাবস্থায় শসা খাওয়ার উপকারিতা কত চলুন তা জেনে নেওয়া যাক,
ভিটামিন-সি,কে, বি, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন ও জিংক এর মতো খনিজ সমৃদ্ধ সবজি হলো শসা যে পুষ্টিগুলো একজন গর্ভবতী মহিলার বিশেষ প্রয়োজন। গর্ভবতী মহিলার মানসিক চাপ নেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে এবং সে মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে শসা।
শসাতে থাকা পটাশিয়াম যা গর্ভাবস্থায় রক্তের চাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে থাকে। আবার শসা শরীরের সোডিয়ামের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে এবং তরলের ভারসাম্য বজায় রাখতে কাজ করে সে কারণে গর্ভাবস্থায় রক্তচাপের মাত্রা স্থিতিশীল রাখার জন্য শসা খাওয়া খুবই প্রয়োজন।
তবে শসা খাওয়ার ফলে ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে কারণ শসাতে পানি ও লবণের মাত্রা বেশি রয়েছে। তবে যাদের অ্যালার্জিজনিত সমস্যা বা বদ হজমের সমস্যা রয়েছে তারা গর্ভাবস্থায় শসা খাওয়ার পূর্বে রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
শসা খাওয়ার অপকারিতা
প্রতিটা খাদ্য গ্রহণের পূর্বে মনে রাখতে হবে যে প্রত্যেকটা খাবারের কিন্তু পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া বিদ্যমান। সে কারণে আপনি যে খাবার গ্রহণ করুন না কেন সেটা অবশ্যই পরিমাণমতো খেতে হবে। শসা খাওয়ার উপকারিতা যেমন রয়েছে তেমনি শসা খাওয়ার অপকারিতাও রয়েছে।
সে কারণে শসা খাওয়ার পূর্বে শসা ভালো করে ধুয়ে নিন কেননা ফরমালিন মেশানো হতে পারে। আবার ভারী কোন খাবার খাওয়ার পর কখনই শসা খাবেন না তার কারণ হলো শসাতে কিছু বিশেষ উপাদান থাকে যা দেহের খাদ্য হজমে ব্যাহত ঘটাতে পারে।
ফ্রিজ থেকে বের করে তাৎক্ষণিক সেই শসা খাবেন না তাতে করে ঠান্ডা লাগার সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি শসার পূর্ণাঙ্গ উপকারিতা পেতে হলে নিয়মিত এবং পরিমাণ মতো শসা খাওয়ার অভ্যাস করুন প্রয়োজনে রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
শেষ কথা
সুপ্রিয় পাঠক, দেশ ইনফো বি.আর ওয়েবসাইটের এই আর্টিকেলে পিরিয়ডের সময় শসা খেলে কি হয় এবং গর্ভাবস্থায় শসা খাওয়া যাবে কি না ও শসা খাওয়ার উপকারিতা এবং শসা চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে অন্যদের সাথে শেয়ার করুন।
দেশইনফোর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url